রাতে ঘুম না আসার কারণে যে রোগগুলো হতে পারে
রাতে ঘুম না আসা বা অনিদ্রাকে অনেকের সাধারণ সমস্যা মনে করে, কিন্তু বাস্তবে এটি
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এক নীরব ঘাত। ঘুম হলো শরীরের প্রকৃতিক মেরামত ও
পুনরুদ্ধের প্রক্রিয়া যখন এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত হয় তখন দেহ ও মাইন্ড এর ওপর
অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে।
ঘুমের অভাবে ধীরে ধীরে আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে নানা জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ
,যেমন ডায়াবেটি, হৃদরোগ , স্মৃতিশক্তি কমে যায় , মানসিক রোগ হয়, রোগ
প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায় ।এগুলো স্বাস্থ্য সমস্যা সরাসরি এই অনিদ্রা থেকে
জড়িত , তাই ঘুম না আসাকে কখনই অবহেলা করা উচিত নয় । এটিকে গুরুত্বের সাথে দেখা
এবং প্রয়োজনের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অন্তত জরুরী ।
পেজ সূচিপত্রঃ রাতে ঘুম না আসার কারণে যে রোগ গুলো হতে পারে
হৃদরোগ ও স্ট্রোক
প্রথমে আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হৃদপিন্ডের কথায়, ঘুম হচ্ছে হৃদপিন্ডের
জন্য প্রকৃতির দেওয়া একটি বিরতি ।এই সময়ে হিদস্পন্দনের গতি কমে রক্তচাপ নেমে
আসে। এবং হৃদপিণ্ড কিছুটা হলেও বিশ্রাম পায়।
উচ্চ রক্তচাপের জন্মঃ নিয়মিত ঘুম না হলে শরীরের ক্রমাগত স্টেট হরমোন
নিঃসরণ করতে থাকে। এই হরমোন গুলি রক্তনালী গুলোকে সংকুচিত করে এবং হিতিস্পন্দন
বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এই উচ্চ রক্তচাপই হল হৃদরোগের
প্রধান পূর্বাভাস।
ধমনীর ক্ষতিঃ দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রা রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে
এবং অ্যাথেরস ক্লেরোসি সের ঝুঁকি বাড়ায়। এই প্লাক জমে রক্ত
লালি সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে হৃৎপিণ্ডের রক্ত প্রবাহ কমে গিয়ে হার্ট
অ্যাটাক কিংবা মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে স্ট্রোক হতে পারে।
পরিসংখ্যানের ভাষ্যঃ গবেষণ তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্টকের ঝুকে সাত থেকে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো ব্যক্তিদের তুলনায়
প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস
ঘুম এবং রক্তে শর্করার মাত্রার মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক ঘুমের সময় আমাদের
শরীর ইনসুলিন নামক হরমোন প্রতিবেশী সংবেদনশীল হয় যার রক্ত থেকে গ্লুকোজ কে কোষে
প্রবেশ করতে সাহায্য করে শক্তি উৎপাদনের জন্য
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সঃ অনিদ্রা এই প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়
এটি শরীরকে ইনসুলিনের প্রতি সহনশীল বানিয়ে তুলে ফলে অগ্নশয় থেকে বেশি বেশি
ইনসুলিন নিঃসরণ হওয়া সত্ত্বেও রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না এই
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সই হল ডায়াবেটিসের মূল ভিত্তি
হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ ঘুম কম হলে ক্ষুধা বাড়ে হর মনের মাত্রা বেড়ে
যায়। এবং পেট ভরা থাকার অনুভূতি হরমোনের মাত্রা কমে যায়।এর ফলে অস্বাস্থ্যকর
খাবার বিশেষ করে মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে
যায়।ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরো বাড়াই, একটি গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র এক
সপ্তাহ প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা ঘুমানোর ও পাশে একজন সুস্থ মানুষের
শরীরে প্রি ডায়াবেটিক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
স্থূলতা ও ওজন বৃদ্ধি
হরমোনালঃ ঘ্রেলিন ও লেপটিন হরমোনের তারতম্য আপনাকে রাতের বেলাতেও
অস্বাস্থ্যকর খাবার এর দিকে ঠেলে দেয়। মস্তিষ্ক যখন ক্লান্ত থাকে তখন এটি
উচ্চ ক্যালোরি ও শর্করা যুক্ত খাবারের মাধ্যমে দ্রুত শক্তি পেতে চাই।
বেশি খাওয়া ও মেটাবলীজমঃ গবেষণায় দেখা যায় কমানো লোকেরা সাধারণত বেশি
ক্যালোরি গ্রহণ করে।বিশেষ করে রাতের খাবারের পর শুধু তাই নয় অপর্যাপ্ত ঘুম
মেটাবলিক রেটকেও কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ আপনার শরীর ক্যালোরি পোড়ানোর গতি হীর হয়ে
যায় ফলে একই ধরনের খাদ্য ও ব্যায়াম করলেও যারা পর্যাপ্ত ঘুমান, তাদের তুলনায়
আপনার ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ
ঘুমিয়ে পড়লে সব দুঃখ দূর হয়, এই কথাটির মধ্যে গভীর বৈজ্ঞানিক সত্য নিহিত
রয়েছে ঘুম আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রকৃতির থেরাপি । স্লিপ নামক
ঘুমের পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্কের দিনের তথ্য ও স্মৃতি প্রতিক্রিয়া করে নেতিবাচক
আবেগের প্রধান কমিয়ে দেয়।
অবসাদের দুষ্টচক্রঃ যখন আপনি নিয়মিতভাবে ঘুম থেকে বঞ্চিত হন।তখন আপনার
মস্তিষ্ক নীতিবাচক উদ্দীপনাগুলোকে আরও শক্তি শালী ভাবে বিক্রিয়া করতে শুরু
করে।এবং ইতিবাচক বিষয়গুলোর উপেক্ষা করে। এর ফলে হতাশা হতাশা রাগ এবং উদ্যোগের
মাত্রা বেড়ে যায় মজার বিষয় হলো অবসাদ ও আবার অনিদ্রা সৃষ্টি কর।হলে একটি অবসাদ
অনিদ্রা দুষ্টচক্র তৈরি হয় খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্কের রাসায়নিকের অসামঞ্জঃ ঘুম শেরোটোনিন, ডোপামিম, এবং নেরো
পিনে ফ্রিনের মত নিউর ট্রান্সমিটারের ভারসাম্য পরে
যা আমাদের মোট স্থিতিশীল রাখে ঘুমের অভাব এই রাসায়নিক গুলোর ভারসাম্য নষ্ট
করে যা সরাসরি ডিপ্রেশন ও এনজাইটি ডিসঅর্ডারের সাথে যুক্ত।
ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া ও সংক্রমণের প্রবণতা
ঘুম কেবলমাত্র ক্লান্তি দূর করার মাধ্যমে নয়, এটি আমাদের দেহের প্রকৃতি
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা স্টেমের শক্তিশালী কার্যকারী অস্ত্র । আমরা যখন গভীর ঘুমে
থাকি তখন আমাদের দেহে এক জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়। যা আমাদেরকে
রোগ জীবাণু বিরুদ্ধে প্রস্তুত করে কিন্তু যখন নিয়মিতভাবে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত
ঘটে।তখন এই অদৃশ্য বর্মটি করতে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে ,এবং আমরা নানাবিদ
সংক্রমণের প্রতি অন্তত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
ঘুমের সময় বিশেষ করে গভীর ঘুমের পর্যায়ে আমাদের শরীর সাইটোকাইনস নামক
বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন নিঃসরণ করে। ভাইরাস ও অন্যান্য রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই
করার জন্য আমাদের ইমিউন কোষগুলিকে সক্রিয় ও সংগঠিত করে। এছাড়াও, ঘুমের সময় আমাদের
দেহ টি-সেল নামক অন্যতম শক্তিশালী ইমিউন কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
টি-সেলগুলি সংক্রমিত কোষ শনাক্ত করে ধ্বংস করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা
পালন করে।
যখন আমরা পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম থেকে বঞ্চিত হই, তখন এই পুরো প্রক্রিয়াটি বিঘ্নিত
হয়। শরীরে সাইটোকাইনসের উৎপাদন হ্রাস পায়, এবং টি-সেলগুলির কার্যক্ষমতা কমে যায়।
ফলস্বরূপ, আমাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এটি একটি দরজা খুলে
দেয় নানাবিধ রোগের জন্য। একটি সাধারণ সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস একটি
সুস্থ ও পূর্ণঘুমযুক্ত ব্যক্তির দেহে সহজেই পরাজিত হতে পারে।
কিন্তু একটি ঘুমবঞ্চিত দেহে তা দ্রুতবেগে বংশবিস্তার করে গুরুতর অসুস্থতার সৃষ্টি
করতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিতভাবে ছয় ঘন্টার কম ঘুমান, তাদের দেহে
অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। এমনকি টিকা গ্রহণের পরও,
ঘুমের অভাবে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রা
শুধু তাত্ক্ষণিক সংক্রমণই বৃদ্ধি করে না, বরং এটি দেহের জএর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং এমনকি কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে। এটি
স্পষ্ট যে ভালো ঘুম কেবল আমাদের সতর্কতা ও মুড এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় এটি
আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী রাখার একটি অত্যাবশকীয় কৌশল
সংক্রামক থেকে সুরক্ষিত থাকতে এবং নিয়মিত পূর্ণাঙ্গ ও নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমের
কোন বিকল্প নেই।
স্মরণশক্তি হ্রাস ও আলঝাইমার রোগ
এবং স্মৃতিশক্তির মধ্য রয়েছে সম্পর্ক আমরা যখন ঘুমায় তখন আমাদের মস্তিষ্ক
সংগ্রভাবে কাজ করতে থাকে।সারা দিনের অর্জিত তথ্যগুলোকে বাছাই করার সংঘটিত করা এবং
দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে রূপান্তরিত করার জন্য। কিন্তু যখনই আমরা নিয়মিতভাবে রাতে
পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হই ।তখন এই প্রক্রিয়াটি মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়,যা শুধু
সাময়িক স্মৃতি ভ্রম ঘটায় না। এর মত ভয়াবহ স্নায়বিক রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে
তোলে।ঘুমের সময় বিশেষ করে গভীর নন রেম এর পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্ক হিপো
ক্যাম্পাস ও নিউকটেক্সর মধ্য একটি স্বয়ংক্রিয় সংযোগ স্থাপন করে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে থাকা অস্থায়ী স্মৃতিগুলো স্থায়ী রূপ নেয়ার জন্য
নিউকটেক্স স্থানান্তরিত হয়।ঘুমের অভাবে এই স্মৃতি এক তৈরি করুন প্রক্রিয়া
ব্যবহৃত হয় ফলে আমরা নতুন তথ্য শিখতে এবং তা মনে রাখতে কষ্ট করে।এটি আমাদের
শেখার ক্ষমতা ও জ্ঞানী ও কার্যকারিতা কে দুর্বল করে তোলে।এর চেয়েও গুরুত্ব
ব্যাপার হলো ঘুম মস্তিষ্কের একটি স্বয়ংক্রিয় পরিষ্কার এর ব্যবস্থা হিসাবে কাজ
করে।গভীর ঘুমের অবস্থায় মস্তিষ্কের গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে
এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোর মাঝে জমে থাকা বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করতে
থাকে।
এই বর্জ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো বিটা-অ্যামাইলয়েড ও টাউ প্রোটিন। এই
বিষাক্ত প্রোটিনগুলো যখন মস্তিষ্কে জমা হতে থাকে, তখন সেগুলো প্লাক ও ট্যাঙ্গেল
সৃষ্টি করে।যা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং
শেষ পর্যন্ত স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটায়। এটি হলো আলঝেইমার রোগের মূল প্যাথলজি। ওপর
দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রা এই পরিষ্কারের প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে তোলে। ফলে
বিটা-অ্যামাইলয়েড প্লাক দ্রুত গতিতে জমতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে,মাত্র এক
রাত্রির অপর্যাপ্ত ঘুমেই মস্তিষ্কে বিটা-অ্যামাইলয়েডের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে
বেড়ে যায়।যারা নিয়মিতভাবে ভালো ঘুমাতে পারেন না।
তাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি কেন্দ্র হিপোক্যাম্পাস আকারে সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। যা
আলঝেইমার রোগের একটি প্রাথমিক লক্ষণ। সুতরাং ভালো ঘুম কেবল আজকের স্মৃতিশক্তি
টিকিয়ে রাখার জন্য জরুরি নয়। বরং এটি ভবিষ্যতে আলঝাইমার ও অন্যান্য ডিমেনশিয়া
থেকে সুরক্ষিত থাকার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার নিয়মিত গুণগত মস্তিষ্কের এই
স্বয়ংক্রিয় পরিষ্কারের কাজটি সুষ্ঠুভাবে পরিষ্কার করতে।সাহায্য করে যা আমাদের
স্নায়বিক স্বাস্থ্য দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাই সুস্থ স্মৃতিশক্তি দের
জন্য প্রতিদিনের ঘুমকে অধিকার দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
ঘুম আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘুমের সময় বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণ এবং
কার্যক্রম ঘটে অনিদ্রা এই ভারসাম্যকে নষ্ট করে দেয়।
বৃদ্ধি হরমোনঃ এই হরমোনটি প্রধানত গভীর ঘুমের মিশ্রিত হয় এটি শিশুদের বৃদ্ধি
প্রাপ্তবয়স্কদের টিস্যু মেরামত পেশী গঠন এবং হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখার জন্য
অপরিহার্য ঘুমের অভাবে এই হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়।
যৌন হরমোনঃ ঘুম না হলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়
এছাড়া এটি লিবিড ও বা যৌন ইচ্ছা হাস করে মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিদ্রা মাসিক চক্র
অনিয়মিত করে দিতে পারে এবং উর্বরতা এর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
থাইরয়েড হরমোনঃ দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন এর মাত্রাকে
প্রভাবিত করতে পারে যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতার ব্যাঘাত ঘটায়।
পচনতন্ত্রের সমস্যা
ঘুম ও পঞ্চতন্ত্রের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক যা ঘটবে অ্যাক্সিস নামে
পরিচিত। আমাদের মস্তিষ্ক ও অস্ত্র একটি স্নায়বিক ও রাসায়নিক
নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একে অপরের সাথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংযোগ বজায় রাখে।
যখন ঘুমের স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটে তখন সূক্ষ্ম সংযোগটি বিঘ্নিত হয়,
যা সরাসরি আমাদের পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা ও স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক
প্রভাব ফেলে।ঘুমের অভাবে প্রথমেই প্রভাব পড়ে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না তাদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর,
চর্বি ও চিনিযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। এটি ঘটে ঘরেলিন ও
লেপটিন হরমোনের তার কারণে। এছাড়া, রাত জাগার ফলে অতিরিক্ত স্ন্যাক্স বা
মধ্যরাতের খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা পাচনতন্ত্রের উপর অতিরিক্ত
চাপ সৃষ্টি করে। অনিদ্রা পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে পারে
যার ফলে বুক জ্বলা ও গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণগুলি তীব্রতর হয়।
শয়নের সময় পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যনালী এই
এসিড প্রবেশের ঝুঁকি বেড়ে যায় যা দীর্ঘ মেয়াদে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি
করতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘুমের সাথে আমাদের অন্ত্রের
মাইক্রোবায়নের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ উপকারী
ব্যাকটেরিয়া আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে
ঘুমের অভাবে এই উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ও বৈচিত্র্য হ্রাস পায়।যখন
ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায় ভারসাম্যহীনতা সামগ্রিক হজম
প্রক্রিয়া অনাক্রম্যতা মানসিক স্বাস্থ্য কেউ প্রভাবিত করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি
ঘুমের অভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে
প্রমাণিত। একটি ভয়াবহ সত্য আমাদের দেহের কোষগুলো প্রতিনিয়ত বিভাজিত হওয়ার
ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। পরিবর্তনের শিকার হয় স্বাস্থ্যকর এর প্রক্রিয়ার একটি
শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে।কিন্তু যখন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তখন
এই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাটল ধরে যা ক্যান্সারের কোষের তৃতীয়
বিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ঘুমের সময় আমাদের দেহে মেলা টোনির নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ
করে।যা কেবল ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে না বরং এটি একটি শক্তিশালী
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি কার্সিনোজেনিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে।মেলাটোনিন
টিউমার বৃদ্ধিতে বাধা দান করে, ক্যান্সার কোষের (প্রোগ্রামড সেল ডেথ)
উৎসাহিত করে ।এবং রক্তনালী গঠন কমিয়ে টিউমারকে পুষ্টির অভাবে ফেলে। দীর্ঘ
রাত্রি জাগরণ, বিশেষ করে কৃত্রিম আলোর সংস্পর্শে থাকলে।
মেলাটোনিন উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়, ফলে দেহ তার এই প্রাকৃতিক
অ্যান্টি-ক্যান্সার প্রতিরক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।অনিদ্রা দেহের ইমিউন সুরক্ষাও দুর্বল করে দেয়। প্রাকৃতিক কিলার (এনকে) সেল এবং
টি-সেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইমিউন কোষগুলি, যা ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করে ধ্বংস
করতে তাদের কার্যকারিতা ঘুমের অভাবে হ্রাস পায়। একটি পূর্ণ ঘুমের চক্র এই
ইমিউন সৈন্যদের পুনরায় সজ্জিত ও শক্তিশালী করে।
যখন এই পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তখন ক্যান্সার কোষগুলি
অনিচ্ছাকৃতভাবে বৃদ্ধি পেতে এবং ছড়িয়ে পড়তে সুযোগ পায়।শিফট কর্মীর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্যান্সারের উচ্চ হার এই তত্ত্বটিকে
শক্তিশালী করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রাতের শিফটের কাজকে
"সম্ভাব্য কার্সিনোজেন" হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে, কারণ এটি দেহের প্রাকৃতিক
ছন্দকে বিঘ্নিত করে এবং মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
ঘুমো ব্যথার মাধ্যমে একটি জটিল ও দ্বিমুখে সম্পর্ক পর্যাপ্ত ঘুম প্রাকৃতিক ব্যথা
নাশকের মতো কাজ করে। অন্যদিকে ঘুমের অভাব ব্যথার সংবেদনশীলতাকে উল্লেখযোগ্য হারে
বৃদ্ধি করে। যখন অনিত্রা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয় তখন এটি একটি ভাইরাস সৃষ্টি করে
ব্যথার কারণে ঘুম আসে না ।আবার ঘুম না আসায় ব্যথা তীব্রতা বেড়ে যায়
অ্যান্ড্রজেনাস ওপিওড পেপটাইড এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক সিস্টেম।সক্রিয়
করে যা ব্যথায় সংকেত প্রক্রিয়াকরণের সহতা করে গভীর ঘুমের পর্যায় এই দেহে
প্রদাহ রোধই প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় হয়।
যা ব্যথা সৃষ্টিকারী প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে কিন্তু যখন আমরা নিয়মিতভাবে ঘুম
থেকে বঞ্চিত হই। তখন এই প্রকৃতিক ব্যথা নাশক সিস্টেমটি দুর্বল হয়ে পড়ে
মস্তিষ্কে ব্যথা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলি ও ঘুমের অভাবে অপরিবর্তিত হয়।
গবেষণায় দেখা ,গেছে ঘুম বঞ্চিত লোকদের মস্তিষ্কের প্রাথমিক সোমাটো সেন্স
রি কটেক্স বেশি স্বয়ংক্রিয় থাকে।যার ফলে তারা একই ব্যথা অধিক তীব্রতার
সাথে অনুভব করে। একই সাথে এবং অ্যান্টি রিয়ার সিঙ্গুলেট কটেক্স শক্তি পায়জামা
মানসিকভাবে ব্যথার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।আর্থ্রাইটিস, মাইগ্রেন এবং
দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথাএর মতো রোগগুলিতেও ঘুমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রয়েছে।
রাতের বেলা ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় রোগীরা ঘুমাতে পারে না, আবার ঘুম না হওয়ায়
পরের দিন ব্যথার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। এই চক্রটি ভাঙতে না পারলে রোগীর
অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকে।ঘুমের অভাবে শুধু শারীরিক ব্যথাই নয়, বরং
মানসিক স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হয়, যা ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতাকে আরও হ্রাস করে।
উদ্বেগ ও বিষণ্নতা ব্যথার উপলব্ধিকে আরো শক্তিশালী করে তোলে শারীরিক ও মানসিক
কষ্টের একটি জটিল জাল তৈরি করে।
সুতরাং, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ব্যবস্থাপনায় ঘুমের ভূমিকা অপরিসীম। নিয়মিত গুণগত
ঘুম শুধু ব্যথার তীব্রতাই কমায় না, বরং জীবনের সামগ্রিক মান ও উন্নত করে ব্যথা ও
অনিদ্রার এই সম্পর্ককে জটিলতার কারণে শান্তিরা এখন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায়
ঘুমাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধিকেও গুরুত্বের সাথে অনুরোধ করেন।
রাতে ঘুম না আসার কারণে যে রোগগুলো হতে পারে-শেষ কথা
রাতে ঘুম না আসা কেবল অস্বস্তিকর অনুভূতি নয়, এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। এটি
ডায়াবেটিসের কারণ হয় ইনসুলিন প্রতিরোধের মাধ্যমে। ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্নতা ও
উদ্বেগ দেখা দেয়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।
স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও আলঝেইমারের ঝুঁকি তৈরি হয়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, হজমজনিত
সমস্যা এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সূত্রপাত ঘটে। ক্যান্সারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
তাই সুস্থ জীবনের জন্য পর্যাপ্ত গুণগত ঘুম অপরিহার্য, একে অবহেলা করা উচিত নয়।
সফটনড়িতে নীতিমালা ; মেনে ;কমেন্ট করুন ;প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url